October 19, 2024, 3:25 pm
মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী থেকে : বৃষ্টির পরিমান দিনে দিনে কমে যাওয়া, ইরি আমন মৌসুমে বরেন্দ্র প্রকল্পের ডিপটিউবল গুলিতে বেশী পরিমান ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা, ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুস্ক মৌমুমে নদীগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় পানি রিচার্জ না হওয়ার করণে উত্তরাঞ্চলের পানির স্তরে নীচে নেমে যাচ্ছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। পূর্বে ডিপটিউলে ১ ঘন্টা পানি দিলে ১ বিঘা জমিতে সেচের কাজটি হয়ে যেত এখন পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ার ফলে পানি কম উঠছে, ২/৩ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে ফলে কৃষকদের সেচ খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানির স্তর নামছে। উত্তরের অন্য জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অটুট রয়েছে। তবে গত এক দশকে দেশের উত্তর-পশ্চিমের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোয় বোরো ধানের আবাদ কমে গেছে। এর পরও রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানির স্তর নামছে। গবেষকেরা বলছেন, দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলার পানির স্তর নামছেই। বর্ষা মৌসুমেও এ স্তর স্বাভাবিক অবস্থায় আসছে না। যদিও এই তিনটি জেলা বাদে অন্য জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অটুট রয়েছে।
‘সাসটেইনিং গ্রাউন্ড ওয়াটার ইরিগেশন ফর ফুড সিকিউরিটি ইন দ্য নর্থইস্ট রিজিয়ন অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। এই গবেষণার প্রথম ধাপ চলেছে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় ও শেষ ধাপ চলেছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। গত বৃহস্পতিবার এ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও) গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়। দেশের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ পানি পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) এই গবেষণায় যুক্ত ছিল।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় এ গবেষণা হয়। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সিএসআইআরওর প্রিন্সিপাল রিসার্চ সায়েন্টিস্ট মো. মাইনউদ্দিন।
গবেষণার জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এসব অঞ্চলের ৩২৮টি টিউবওয়েলের পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানি সব জায়গায় সমান হারে কমছে না। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময় রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাদে ১৩ জেলায় জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর ফিরে আসে।
বরেন্দ্র এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান।
তিনি বলেন, বরেন্দ্র এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। এ ছাড়া পানির অন্যায্য একটি ব্যবসা শুরু হয়েছে এসব এলাকায়। পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ার এটা একটি বড় কারণ।
গত দশকে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কোথাও বোরো চাষের পরিমাণ কমেছে, কোথাও বন্ধ হয়েছে। এ সময় বরেন্দ্র অঞ্চলেও বোরো চাষের প্রসার ঘটেনি। এর বদলে কোথাও ভুট্টা, কোথাও আলু চাষ বেড়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করে দেখা গেছে ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০১৬ সালের রাজশাহী জেলায় বোরোর চাষ হয়েছে যথাক্রমে ৫৭২, ৬০৯ ও ৪৪৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। সবচেয়ে বেশি বোরো চাষ হয়েছে ২০০৮ সালে ৭৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। এরপর থেকে বোরো চাষের হার কমেছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরোর চাষ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেলেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নামছে। পানির স্তর এভাবে নামার পেছনে কয়েকটি কারণের কথা বলছেন গবেষকেরা।
এগুলো হলো, বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া, বৃষ্টির তীব্রতার পরিবর্তন, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, জলাশয় কমে যাওয়া, পানি পুনর্ভরণ এলাকা কমে যাওয়া এবং শুকনা মৌসুমে নদীর পানির কম প্রবাহ।
সময় থাকছে এব্যপারে সংশ্লষ্ট মহলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।